ছাদ বাগানের শুরুটা কিভাবে করবেন ?
নাসার্রী থেকে কেনা আনাড় গাছ |
ধরেই নিলাম আপনি প্রচন্ড ব্যস্ত একজন মানুষ । কিন্তু মনে মনে আপনি প্রকৃতি পছন্দ করেন । ফুল,পাখি,গাছ, পালা, তরু লতা আপনার ভাল লাগে । এর মানে হচ্ছে ,আপনি একজন প্রকৃতি প্রেমি মানুষ।
সব মানুষের মধ্যেই অবশ্য প্রকৃতির প্রতি কম, বেশি আগ্রহ বা ভালবাসা থাকে । সময়, সুযোগ থাকলে প্রকৃতির সানিধ্যে সময় কাটাতে কে না চায় বলুন?
যদি সত্যিই আপনি একটি ছাদ বাগান করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন, তাহলে এ লেখাটি আপনার জন্য । লেখাটিতে আমার অভিজ্ঞার আলোকে কি ভাবে একটি ছাদ বাগান তৈরি করা যায় তা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছি ।
ছাদ বাগান তৈরি করার জন্য কিভাবে প্রস্তুতি নিবেন :-
বাগানের শুরুটা করার জন্য আপনাকে একটি প্রস্তুতির ভেতর দিয়ে যেতে হবে । মনে রাখবেন, আপনার প্রস্তুতি যতো ভাল হবে আপনার ছাদ বাগান ততোবেশি সুন্দর ও ন্যাচারাল হবে ।
শুরুতেই ছাদটি পরিস্কার করে ফেলুন । সম্ভব হলে, ছাদ ঝাড়ু দিয়ে ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে দিন । এর ফলে আপনার ছাদ জীবানু মুক্ত হবে । গাছ লাগাবার জন্য ছাদের একটি ছায়া যুক্ত অংশ বেছে নিন ।
শুরুতেই ঠিক করে নিন কি ধরনের গাছের বাগান আপনি গড়ে তুলতে চাইছেন ।
ক. #ফুলের বাগান ,খ. #ফলের বাগান,গ. #সবজির বাগান ,ঘ. #ফুল, ফল ও সবজির ভ্যারাইটি বাগান ।
আমি বলবো, শুরুটা করুন ফুল ও সবজি দিয়ে । কারণ ফলের বাগান এর জন্য আপনার কিছু কৃষি বিভিক জ্ঞানের প্রয়োজন হবে । সেটা ফুল ও সবজি চাষের মধ্য দিয়ে অর্জন করতে পারবেন । একটি বাগানে নানা রকম সমস্যা দেখা দেয় । নিজেস্ব জ্ঞান ও বুদ্ধি দিয়ে সে সব সমাধান করতে হবে ।
ছাদে ধুন্দল চাষ |
পাত্র নির্বাচন :_
বিভিন্ন সাইজের, ছোট বড় ড্রাম,টব,পুরাতন বালতি দিয়ে শুরুটা করতে পারেন । আমি বলবো, শুরুটা করুন টব এবং বালতি দিয়ে । ধরুন আপনি পাচটি গাছ লাগাবেন । সেক্ষেত্রে আপনি সাতটি পাত্র কিনুন বা যোগার করুণ । কেন অতিরিক্ত দুটো পাত্র কিনবেন , সেটা পরে বলবো ।
টব ড্রাম বা বালতির মূল্য কত :
একটি ১০০ লিটারের ড্রামের মূল্য ১০০০ থেকে ১২শ টাকা । মাঝখান থেকে কেটে নিতে হবে । তাতে দুটো ড্রাম পাবেন । ৫০ লিটারের একটি ড্রামে মাটি লাগবে, ৫০ কেজি সিমেন্টের বস্তার পাচ থেকে সাত বস্তা মাটি । অথাৎ ৫০ লিটারের একটি ড্রাম প্রস্তুত করতে প্রায় ১২শ টাকা খরচ হয়ে যাবে । তবে ভয় পাবেন না । আপনি শুরু করবেন, ঘরের পুরাতন বালতি অথবা টব দিয়ে । এক বস্তা মাটি কিনলে তা দিয়ে তিনটি ১২ ইঞ্চি টব অনায়াসে ভরে যাবে । আর ১৪ থেকে ২০ লিটারের বালতি হলে , দুটি বালতি ভরতে পারবেন । টবের , দাম পরবে ১শ থেকে ১শ ২০টাকা । এছাড়া ১৪ লিটারের রং এর বালতি পাওয়া যায় । দাম নিবে ৭০ থেকে ১০০টাকা ।
৫০ লিটারের একটি ড্রাম । মাটিসহ প্রস্তু করতে প্রায় ১২শ টাকা লেগে যায় । |
মাটি প্রস্তুত :
পাত্র নির্বাচনের পর মাটি প্রস্তুত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ । এ জন্য আপনাকে একটু পরিশ্রম করতে হবে । শহরগুলোতে হুট করেই মাটি পাওয়া যায় না । তাই মাটি যোগার করার জন্য আপনাকে একটু বেগ পেতে হবে । তবে হতাশ হবেন না । আমি বলে দিচ্ছি মাটি কোথায় পাবেন ।
বাংলাদেশের প্রতিটি শহরেই এখন গড়ে উঠেছে , ছোট বড় নানা ধরনের নার্সারি । আর এইসব নাসার্রীগুলোতে মাটির বস্তা কিনতে পাওয়া যায় । শুরুতে আপনাকে সেখান থেকেই দু তিন বস্তা বা প্রয়োজন মতো মাটি কিনে এনে শুরু করতে হবে । সাথে কিন্তু এক বস্তা শুকনো গোবর কিনতে ভুলবেন না । মনে রাখবেন, প্রতি ৩ বস্তা মাটির জন্য এক বস্তা গোবর । নার্সারীর লোকেরা গোবর মিশ্রিত মাটি বিক্রি করে চড়া মূল্য , তাতে সামান্যই গোবর থাকে । আপনি সেটা কিনবেন না । তিন বস্তা শুধু মাটি ও এক বস্তা গোবর আলাদা কিনে বাসায় নিয়ে নিজে মিশিয়ে নিবেন । এতে ফলাফল ভাল পাবেন।
ছাদে লেবু চাষ |
মাটির বস্তার মূল্য কত :
নার্সারীগুলো গোবর মিশ্রিত মাটি বিক্রি করে দেড়শো থেকে দুশো টাকা । শুধু মাটি বিক্রি করে ১শ থেকে ১শ ২০ টাকা । শুধু মাটি ১শ টাকা । দরাদরি করলে, ১শ টাকায় গোবর মিশ্রিত মাটি কিনতে পারবেন । শুধু মাটি ৮০টাকা করে নিবে । নিয়মিত কিনলে, আরো কমে পাবেন । আমি ৬০ টাকা করে শুধু মাটির বস্তা কিনি । শুকনো গোবরের বস্তা কিনি ৮০ টাকা করে ।
এখানে একটা উপদেশ দিবো, বর্তমানে ছাদ বাগান নিয়ে নানা প্রতারণা হচ্ছে । তাই বলবো, আপনার বাগানের জন্য অন লাইন থেকে একটি জিনিস ও কিনবেন না । কিনলেই ঠকবেন ।
বাগানের জন্য গাছের যোগার :
ছাদ ও টব প্রস্তুত করার পর নার্সারি থেকে বিভিন্ন ফুলের গাছ কিনে আনুন ।চাহিদা মতো গাছ ফুল ও ফলের গাছ নার্সারীগুলোতে পেয়ে যাবেন । মূল্য নিবে ,৬০টাকা থেকে ২শ টাকার মধ্যে । তবে দামাদামি করতে হবে । মনে রাখবেন, আপনার আবেগ নিয়ে অন্যে প্রতারণার ফাদ পেতে বসে আছে । শহরের নাসারীগুলোতে যে গাছ বিক্রি হয়ে ১শ টাকা সেটি তাতে ক্রয় মূল্য হয়তো ২০ টাকা । কিন্তু আপনার কাছে দাম চাইবে ৩শ টাকা । আপনি আধেক বললেই দিয়ে দিবে । এটাই তাদের প্রতারণা । নার্সারীতে গেলে দু,তিনটে গাছে একসাথে বাছুন । তারপর একসাথে দাম বলুন , দু থেকে তিনশ টাকা । তাই ৩শ টাকা দাম চাইলে ,
এ গোলাপ গাছটি ৬০ টাকা দিয়ে কেনা । দাম চেয়েছিলো ২শ টাকা । |
শাক, সবজির জন্য কি করবেন :
শাক,সবজির গাছ কখনোই নাসারী থেকে কিনবেন না । নিজে বীজ রোপন করে চারা তৈরি করুণ । বাজারে বীজ কিনতে পাওয়া যায় । বীজের প্যাকেট মূল্য ২০ টাকা থেকে ৮০ টাকা ।
সবজির জন্য অবশ্যই আপনাকে একটি মাচা তৈরি করে দিতে হবে । এ জন্য যোগার করতে হবে , বিভিন্ন সাইজের বাশ ,দড়ি ও অন্য বড় গাছের কাটা ডালের অংশ । মাচা বেধে তাতে নারেকেল বা অন্য বড় গাছের কাটা ডালের অংশবিছিয়ে দিয়ে তাতে সবজি গাছ বাইয়ে দিতে হবে ।
ছাদে করল্লা চাষ |
কিভাবে চারা তৈরি করবেন :
চারা তৈরি করা খুবই সহজ । একটি বড় বালতি বা পাত্রে আপনার কিনে আনা মাটিতে গোবর মিশ্রিত করে । দশ থেকে পনেরো দিন রেখে দিন । তারপর তাতে দু তিনটে করে বীজ রোপন করে দিন । প্যাকেট থেকে বীজ বের করে দু'তিন ঘন্টা ভিজিয়ে রাখলে অংকুরিত ভাল হয় । চারা অংকুরিত হবার আগ পর্যন্ত নিয়মিত পানির ছিটা দিন ।
এক সপ্তাহ্ থেকে দশ দিনের মধ্যে বীজ থেকে চারা বের হবে । চারাগুলো ছায়া যুক্ত স্থানে রাখুন । নিয়মিত পানি দিন । চারাগুলো একটু বড় হলে , তা অন্য টবে বা বালতিতে লাগিয়ে দিন ।
Eggplant বা বেগুন গাছ মূল্য ৫ টাকা |
ফুল, ফলের গাছ কেনার পর যা করবেন :
গাছ কিনে এনেই টবে বা বালতিতে লাগিয়ে ফেলবেন না । দু'থেকে তিন দিন রেখে দিন । এর ফলে সে নিজেকে নতুন পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিবে ।
গাছ কিনে আনার পর সেটিকে জীবানু মুক্ত করা একান্ত প্রয়োজন । কেননা নাসারিতে অনেক গাছের সাথে থাকার ফলে সেটাতে নানান প্রকার জীবানু ও কিট পর্তঙ্গ সংক্রামন ঘটতে পারে । ফলে আপনার বাগানে থাকা অন্যান্য গাছগুলো সহজেই সেটি থেকে আক্রান্ত হতে পারে ।
ছাদে পেয়ারা চাষা |
কলা গাছ । নাসারীতে গেলে ৩শ থেকে ৫শ টাকা মূল্য চায় । |
গাছের পরিচর্যা : -
গাছ তো লাগালেন । এবার পরিচর্যা শুরু করুন । যেহেতু ছাদে বাগান । তাই নিয়ম করে প্রতিদিন পানি দিতে হবে । সকাল কিংবা সন্ধ্যা যে কোন এক বেলা নিয়ম করে পানি দিন । পানি দেবার আগে ,মাটিতে আঙুল দিয়ে মাটিতে পানির পরিমাপ দেখে নিন । সেই অনুযায়ী পানি দিন ।
পোকা মাকড় দমন : -
গাছ থাকলে পোকা মাকড় আসবেই । তাই সেসব দমন করার পৌস্তুতি রাখতে হবে । বাজের বিভিন্ন কোম্পানির কীটনাশক কিনতে পাওয়া যায় । মূল্য ৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত । এ জন্য Google এ ACI এর ওয়েব সাইট থেকে কিটনাশকের মূল্য , কার্যকারীতা , উপকার অপকার জেনে নিন । মনে রাখবেন , কীর্টনাশক কিন্তু সকল কিছুর জন্যই ক্ষতিকর তাই এগুলো সাবধানে ব্যবহার করতে হবে। ব্যবহারের পূর্বে মাত্রা থেকে ও বুঝে নিতে হবে । ব্যবহারের পর সাবান দিয়ে হাত ভাল করে ধুয়ে ফেলতে হবে ।সকল প্রকার কীটনাশক শিশুদের কাজ থেকে দূরে রাখতে হবে ।
ছবি ও লেখার জন্য কপিরাইট
ইন্জি.সাখাওয়াত হোসেন
E-mail : shakhawat19@gmail.com
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন