ছাদে ধুন্দল চাষ ও পরিচর্যা

Posted by ছাদে চাষাবাদ,নগর চাষা on মার্চ ৩০, ২০২২ with No comments

ধুন্দল একটি জনপ্রিয় ও মজাদার সবজি হিসাবে গ্রাম বা শহরে সর্বত্র পরিগণিত হয়ে আসছে । চিংড়ি মাছ দিয়ে ধুন্দল কার না পছন্দ।

মজাদার এই সবজিটি  চাষ করা কিন্তু খুব সহজ । একটু পরিশ্রম করলেই, ছাদের টবে বা ড্রামে খুব সহজেই ধুন্দল চাষ করা যায় । ঢাকা শহরের প্রায় বাসা,বাড়ির ছাদে বা ব্যালকুনিতে এখন টব, ড্রাম বা পুরাতন বালতিতে ধুন্দল চাষ করা হয়ে থাকে । 

ঠিক মতো একটি গাছ বড় করতে পারলে একটি পরিবারের চাহিদা খুব সহজেই পূরণ করে ও প্রতিবেশীদের মাঝে বিতরণ করা যায় ।

আজকের লেখায় আমরা জেনে নিবো সঠিক ভাবে ধুন্দল চাষ করতে হলে আমাদের কি কি করতে হবে এবং কি কি করা যাবে না । চলুন তাহলে কথা না বাড়িয়ে ধুন্দল চাষে লেগে যাই ।


সময় :
 
ধুন্দল একটি শীতকালীন সবজি । তবে বর্তমানে ১২ মাস ই জন্মে । সে জন্য চাষ করার আগে জাত নির্বাচন করে নিতে হবে । মনে রাখতে হবে , ১২ মাসি জাত ছাড়া অন্য ধুন্দল গাছে অসময়ে লাগালে ফলন পাওয়া যাবে না ।

মাটি প্রস্তুত : 
 
ধুন্দল সাধারণত দোঁয়াশ মাটি, বেলে দোঁয়াশ মাটিতে ভাল জন্মে । তবে দোঁয়াশ, বেলে দোঁয়াশ মাটি পাওয়া না গেলে এটেল মাটির সাথে দ্বি-গুন হারে গোবর বা কম্পোস সার ও লাল বালি মিশিয়ে ধুন্দল চাষ করা যায় ।  এছাড়া নদীর বালি মাটির সাথে ইটের খোয়া ও শুকনো গোবর মাশিয়েও ধুন্দল চাষ করা যায়। টব,ড্রাম না থাকলে সিমেন্টের বস্তাতে মাটি ভরেও ধুন্দল চাষ করা যায় ।

মাদা তৈরি : 
 
 যে কোন সবজি চাষের জন্য একটি মাদা তৈরি করে নিতে হয় । মাদা হচ্ছে, ড্রাম বা জমির যেখানে চারাটি লাগানো হবে তার চারপাশ থেকে মাটি এনে মাঝখানটি মাটির ঢিবির মতো একটু উচু করে নেওয়া। যেহেতু মাদার উপরে চারাটি রোপন করতে হয় ,তাই মাদার তৈরির পূর্বে মাদার নিচে যথেষ্ঠ পরিমান জৈব সার ও গোবর দিলে ভাল ফলন হয় ।  দোঁয়াশ বা বেলে দোঁয়াশ মাটির সাথে সম পরিমাণে গোবর বা জৈব সার মিশিয়ে মাদা তৈরি করে নিতে হবে । রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে চাইলে , ২শ গ্রাম হারে ইউরিয়া,টিএসপি ও পটাশ ও সামান্য পরিমাণ বোরন সার খুব ভাল করে মিশিয়ে মাটি তৈরি করে । চট বা ছালার বস্তা দিয়ে ১৫ দিন ঢেকে রাখতে হবে । এর পর ঢাকনা তুলে নেড়ে চেড়ে আরো কয়েক দিন রেখে দিলে মাটি তৈরি হয়ে যাবে ।

 

মাটি প্রস্তুত হয়ে গেলে তাতে  তিন থেকে চারটি বীজ রোপণ করে ভাল মতো পানি দিয়ে হালকা কিছু দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে । প্রতিদিন নিয়মিত তাতে পানির ছিটা দিতে হবে । বীজ রোপণের আগে সারা রাত বীজ পানিতে ভিজিয়ে রাখতে অঙ্কুরিত হতে সহজ হবে ।  

বীজ বপনের ৭ থেকে ১০ দিন পরে বীজ থেকে চারা জন্মাবে । এ সময় চারাগুলোকে ঢেকে রাখতে হবে। চারাগুলো একটু বড় হলে । দুটো চারা রেখে অন্যগুলো তুলে ফেলতে হবে ।  একটি মাদায় একটি চারা থাকলে ভাল ফলন পাওয়া যায় । চারা দু'হাত লম্বা হলে তাতে বালাই নাশক স্প্রে করতে হবে । এবংচারা বেয়ে উঠার জন্য মাচা তৈরি করে দিতে হবে । 

মাচা তৈরি :  
 
মনে রাখতে হবে ধুন্দল একটি লতা জাতীয় উদ্ভিদ  তাই । গাছের বৃদ্ধির জন্য । বাঁশ, কঞ্চি দিয়ে ভাল করে মাচা তৈরি করে তাতে নারেকেল গাছের ডাল বিছিয়ে দিলে গাছটি সহজেই বেয়ে উঠতে পারবে। গাছের লতাগুলো দু' তিন হাত বড় হলে প্রত্যেকটি লতার আগা পিন্চিং  করে দিন । এতে নতুন নতুন ডগা বা শাখা প্রশাখা বৃদ্ধি পাবে । মনে রাখবেন , ধুন্দুলের প্রথমে বেরে উঠা শাখাটি থেকে কোন ফলন হয় না । নতুন নতুন শাখা প্রশাখা থেকেই ফলন হয় ।  এই শাখাগুলোকে পিন্চিং বা ভেঙ্গে দেওয়াকেই ওয়ান জি, টু জি, থ্রি জি বলে । জি - মানে জেনারেশন ।

গাছে ফুল চলে এলে ফ্লোরা নামের PGR  (Plant Growth Regulator) স্প্রে করলে ভাল ফল পাওয়া যাবে । এসময় ছাই ছাড়া অন্য কোন প্রকার কীটনাশক ব্যবহার করলে ফসল বিষাক্ত হয়ে যাবে । এবং ফলন কম হবে । 

রোগ বালাই ও পোকামাকড় দমন :  
 
ধুন্দল গাছে ছোট অবস্থা থেকেই পোকা মাকড় ও রোগ বালাইয়ের আক্রমন ঘটে । তাই শুরু থেকেই এ ব্যাপারে যত্ন শীল হতে হবে ।  চারা জন্মাবার আগেই তাই মাটিতে "ফুরাডান" নামের কীটনাশক মিশিয়ে দিতে হবে । তাতে রোগ বালাই পোকার আক্রমন কম হবে । চারা দু হাত লম্বা হলেই , তাতে "নাইটো" নামের কীটনাশক স্প্রে করতে হবে । এর ফলে লেদা পোকা, ছেংগা বা বিছা পোকা , জাব পোকা,মজরা পোকাসহ নানান পোকার আক্রমন হতে গাছকে রক্ষা করা যাবে ।
 
মনে রাখতে হবে , ঠিক মতো পরিচর্যা না করলে গাছ নষ্ট হয়ে যেতে পারে । তাই নিয়মিত যত্ন না করলে গাছ মরে যেতে পারে । মাঝে মাঝে পাতায় পানি স্প্রে করে তারপর ছাই ছিটিয়ে দিতে হবে । এতে জাব পোকা,লিপ মাইনারের আক্রমন থেকে গাছ রক্ষা পাবে । মরা ও পোকায় খাওয়া পাতা ছিড়ে ফেলে দিতে হবে । সেচের মাত্রা অতিরিক্ত হলে গাছে পচন রোগ দেখা দিতে পারে । তাই পরিমান মতো সেচ দিতে হবে ।  ড্রাবে বা টবে গাছ হলে কিছুতেই যেনো জলাবদ্ধতা তৈরি না হয় সেটা খেয়াল রাখতে হবে ।
 

 
 
অধিক ফলন পাবার উপায়
 
প্রখোর রোদের হাত থেকে গাছকে রক্ষা করার জন্য  গাছের গোড়া মালচিং বা ঢেকে দিতে হবে । মালচিং হচ্ছে, খের কুড়া অথবা কচুরি পানা দিয়ে গাছের গোড়াকে ঢেকে দেওয়া । ফলে প্রখোর সূর্যের তাপ থেকে গাছ রক্ষা পায় । গাছের গোড়ার মাটির আদ্রতা ঠিক থাকে ।  খেয়াল রাখতে হবে , টব বা ড্রামের মাটি যেন কিছুতেই শুকিয়ে না যায় । গাছে ফুল চলে এলে, গাছের গোড়া থেকে কয়েক ইন্চি দূরে পাটাশ ও টিএসপি সার প্রয়োগ করলে ভাল ফুল ও ফলের পরিমান বৃদ্ধি পাবে ।  
 
ফল সংগ্রহ : 
 
জাত বেদে গাছ লাগাবার ৪০ থেকে ৫০ দিন পর ধুন্দল সংগ্রহ করা যায় ।  একটি হাফ ড্রামে লাগানো একটি গাছ থেকে প্রায় ৫০ কেজি ধুন্দল পাওয়া সম্ভব ।  ধুন্দল গুকিয়ে গেলে বীজ পাওয়া যায় । শুকনো অংশ ছোবা হিসাবে ব্যবহার করা হয় । 

                                                      
নোট : প্রতিটি ছবি ও লেখা মৌলিক । কোনখান থেকে কপি পেষ্ট করা নয় ।
                                                                                                শেষ ।