কলা চাষ

Posted by ছাদে চাষাবাদ,নগর চাষা on মার্চ ২৪, ২০২২ with No comments

 

সৌখিন ছাদ বাগানিদের ছাদে একটি কলা গাছ না থাকলে বাগানের সৌন্দর্য যেনো পরিপূর্ণ হয় না ।কলা গাছ বাগানের সৌন্দর্য অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয় । তবে ছাদের ড্রামে কলা চাষের জন্য একটু সর্তক থাকতে হবে স্থান নির্বাচন নিয়ে ।  কেননা ঝড় বৃষ্টির কারণে কলা গাছের যেন ক্ষতি না হয় সেটা কলাগাছ রোপনের সময় ই খেয়াল রাখতে হবে । ছাদের এমন একটি স্থানকে কলা গাছ রোপনের জন্য বেছে নিতে হবে । যেখানে ঝড়, বৃষ্টি ও বাতাসের প্রভাব কম হবে । ছায়া যুক্ত স্থানে কলা গাছের জন্য মোটেও ক্ষতিকর নয় । বরং ছায়া যুক্ত স্থানের কলা সুমিষ্ট হয় বেশি । 

আমরা জানি কলা একটি , গ্রীস্মকালীন ফল তবে সারা বছর ই পাওয়া যায় । তবে গ্রীস্মকালে কলার আকার আকৃতি বড় হয় হয়ে তাতে পুষ্টিগুন বেশি থাকে । শীত কালে কলার আকার চুপসে যায়। এবং তাতে পুষ্টিগুন কম থাকে । 

প্রজাতি :  বাংলাদেশে প্রায় ১৫ প্রজাতিত কলা পাওয়া যায় । ছাদ বাগানের জন্য দেশি কাঠালি কলার ভাল ফলন হয় । কারণ এ প্রজাতি কষ্ঠসহিংসু ।

মাটি প্রস্তত :  যে কোন মাটিতে কলা জন্মে । তবে ছাদে কলা চাষের জন্য একটি হাফ ড্রাম বেছে নিতে হবে । 

ড্রামের অধেকটা মাটি ও বাকি অধেকটা শুকনো গোবর ও আধা কেজি পরিমানে চুন দিয়ে খুব ভাল করে মিশিয়ে নিতে হবে । এছাড়া ও ২৫০ গ্রাম ইউরিয়া,২০০ গ্রাম টিএসপি ও ২৫০ গ্রাম পটাশ মিশিয়ে ১৫ দিনের জন্য চট বা ছালা দিয়ে ড্রামের মধ্যে ঢেকে রাখতে হবে । ১৫ দিন পর ড্রাম থেকে চট সরিয়ে নিয়ে মাটি নাড়াচাড়া দিয়ে ৫-৭ দিন রেখে দিতে হবে । এতে মাটিতে থাকা সারের গ্যাস বেড় হয়ে যাবে । এ সময় মাটিতে ২৫০ গ্রাম পরিমানে ফুরাডান সার ছিটিয়ে দিয়ে পানি ছিটিয়ে দিতে হবে । 

চারা রোপন : 

মাটি প্রস্তুতের পর তাতে রুষ্টপুষ্ট দেখে একটি চারা ড্রামের ঠিক মাঝখান লাগাতে হবে । এতে চারপাশে জল সেচ ও খাবার দেওয়া সহজ হবে । চারা রোপনের উপযুক্ত সময় হচ্ছে, জানু - মার্চ । তবে অন্য সময় ও রোপন করা যায় । তবে আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি , এমন একটি সময় চারা রোপন করুন , যাতে শীতের সময় গাছে ফলন না আসে । এর জন্য শীতে কলা গাছ না লাগানোই ভাল । কলাগাছে সাধারণত এক বছরে ফলন আসে ।  তাই শীতে গাছ লাগালে দেখা যায় শীতেই ফলন আসে । 

রোগ বালাই :  

কলা গাছে নানান রকম রোগ বালাই দেখা দেয় । তবে জমি থেকে ছাদে রোগ বালাইয়ের পরিমান কম । শুরু থেকে সর্তক থাকলে এবং ঠিক মতো পরিচর্যা করলে এইসব রোগ বালাই থেকে বেঁচে থাকা যায় ।কলা গাছে সাধারণত যে সকল রোগ বালাই দেখা যায় সেগুলো হলো,পানামা রোগ,মাকো রোগ,পাতা পোড়া রোগ ,পাতার দাগ বা সিগাটোকা রোগ,গোড়া ফাটা রোগ, গোড়া পচা রোগ ইত্যাদি । নিয়মিত ফাঙ্গিসাইট ও কীট নাশক ব্যবহার করলে সহজেই সকল রোগ হতে কলা গাছকে রক্ষা করা যায় ।

কলা গাছের পরিচর্যা  : 

আমি যে প্রদ্ধতি বলেছি সে ভাবে মাটি তৈরি করে নিলে গাছের খুব একটা যত্ন বা পরিচর্যার প্রয়োজন হবে না ।  শুধু  সপ্তাহে একটি ড্রাম ভর্তি করে পানি দিলেই হবে ।এ সময় খেয়াল করবেন । ড্রামের পানি নিস্কাষন ব্যবস্থা যেন ভাল হয় । অতিরিক্ত পানি ড্রামের নিচের ফুটো দিয়ে বের হয়ে যায় । কারণ জলাবদ্ধতা সকল রোগ বালাইয়ের কারণ ।

চারা রোপনের ৬ মাস পরে গাছে জৈব সার দিন । এ সময় থেকে গাছে সরিষার খৈর ভেজানো পানি দিনে মাসে একবার ।  ৬ মাস পরে গাছে আবারো ১০০ গ্রাম ইউরিয়া , ১০০ গ্রাম টিএসপি ও ২০০ গ্রাম পটাশ সার , দুমাসের ব্যবধানে ব্যবহার করুন ।  আট থেকে ১০ মাসে আরেক বার । 

সম্ভবত দশম মাসে গাছে মোড়চা আসবে । এ সময় গাছে আর সার ব্যবহার করবেন না । তবে খৈর ভেজানো পানি দিয়ে যেতে হবে ।  

গাছে মোরচা এলে তাতে কিটনাশক ও ছত্রাক নাশক ছিটিয়ে দিতে হবে । প্রথমে কীট নাশক পরের মাসে ছত্রাক নাশক দিতে হবে । এভাবে পরপর দু বার করে ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে ।  

কলার থোর থেকে সব কলা বের হয়ে গেলে মোড়চা আগাটি কেটে ফেলুন ।  এতে কলা আকার বড় হবে । কলা একটি মোটামুটি আকৃতিতে আসলে , বড় একটি ব্যাগ দিয়ে কলা মুড়ে দিতে হবে । এতে কলায় দাগ ও পোকা মাকড়ের আক্রমন হবে না ।  

কলা সংগ্রহ : 

১২ তম মাসে কোন কোন সময় ১৪ তম মাসে কলা সংগ্রহ করা যাবে । গাছের কলা হলুদ র্বণ ধারন করলে তা কেটে সংগ্রহ করুন ।  কাটা কলা গাছ ফেলে না দিয়ে তা অন্য একটি ড্রামে রেখে দিত তা পোচে জৈব সার পরিনত হবে । 

                                                                                     শেষ ।