ছাদের ড্রামে ডালিম চাষ ও পরিচর্যা

Posted by ছাদে চাষাবাদ,নগর চাষা on মার্চ ২৪, ২০২২ with No comments

 

ছাদে একটি ডালিম গাছ না থাকলে বাগানটি যেন অপূর্ণ থেকে যায় । আর যদি গাছ ভর্তি ডালিম থাকে ! তাহলে তো আর কথাই নেই । খুব সহজেই কিন্তু আমাদের এই ইচ্ছেকে বাস্তবে রূপ দেওয়া যায় । মাটির মতোই ছাদে ডালিমের ফলন খুব ভালো হয় । গাছ লাগাবার পরের বছর থেকেই গাছ থেকে ফল আহরণ করা যায় । এছাড়া ডালিম গাছের খুব একটা পরিচর্যা ও লাগে না ।

প্রস্তুতি কিভাবে নিবেন :  

অন্য ফলের গাছের মতোই ছাদে ডালিম চাষের জন্য আমি সাজেশন দিবো , একটি বড় ড্রাম নির্বাচন করার জন্য । কারণ যে কোন ফলের গাছ ই বড় পাত্রে ভাল জন্মে ।  ড্রামের নিচে পানি নিষ্কাশন এর জন্য অবশ্যই চার থেকে পাঁচটি আঙুল সাইজের ফুটো করে নিতে হবে । ফুটোগুলো মাটির হাড়ির ভাঙ্গা টুকরো দিয়ে ঢেকে দিয়ে , তার উপরে ইটের খোয়া দিয়ে একটি লেয়ার তৈরি করে তার উপর দালান করার বালু ছিটিয়ে দিয়ে মাটি দিতে হবে । তবেই পানি সহজে বের হয়ে যেতে পারবে ।

মাটি : 

 বেলে দোয়াশ,এটেল সব মাটিতেই ডালিম জন্মে । তবে ড্রামে ডালিম চাষের জন্য , ৫০ ভাগ এটেল বা দোয়াশ মাটির সাথে ২৫ ভাগ নদীর বালি ও ২৫ বার্মি কম্পোস্ট মিশিয়ে নিলে খুব ভাল ফলাফল পাওয়া যাবে । ড্রামে মাটি দেওয়ার আগে তা ভাল করে রোদে শুকিয়ে নিন ।  ড্রামে মাটি দেওয়ার আগে তাতে অবশ্যই ১০০ গ্রাম চুন মিশ্রন করে নিতে হবে ।  

যদি রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে চান তাহলে , একটি হাফ ড্রামের জন্য ২০০ গ্রাম ইউরিয়া,২০০ গ্রাম টিএসপি,২০০গ্রাম পটাশ সার মিশিয়ে তা ড্রামে রেখে ১০ থেকে ১৫ দিনের জন্য ঢেকে দিন । ১৫ দিন পর তা নেড়েচেরে দিয়ে তাতে চারা লাগাতে পারেন । 

চারা নির্বাচন : 

ডালিম বা আনাড়ের জন্য চারা নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । এ জন্য বিশ্বস্ত কোন ব্যক্তি বা নার্সারির কাছ থেকে চারা সংগ্রহ করতে হবে । 

মূল্য : 

একটি ভাল মানের চারা ২০০ টাকার বেশি হবার কথা নয় তবে নার্সারিতে ৩ থেকে ৫শ টাকা নিবে । 

পরিচর্যা : চারা কিনে আনার পর সেটি সাথে সাথে টবে বা ড্রমে লাগাবেন না । ভাল মানের একটি ফাঙ্গি সাইট স্পে করে ছাদের একটি ছায়া যুক্ত স্থানে রেখে দিতে হবে । এর ফলে চারাটি একদিকে যেমন জীবানু মুক্ত হবে অন্যদিকে সেটি নতুন পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে পারবে । 

ডালিম গাছের জন্য বার বার পট চেন্জ করার কোন প্রয়োজন নেই । বড় ড্রামেই চারাটি ড্রামের ঠিক মাঝখানে লাগিয়ে দিন । 


 

সাবধানতা :  

কড়া বা ঝুম বৃষ্টিতে কোন চারা লাগাবেন না । তাতে চারাটি মারা যাবার সম্ভাবনা থাকে । চারা লাগাবার পর নিয়মিত পানি দিয়ে যেতে হবে । পরিচর্যা করুণ ।  ধীরে ধীরে চারাটি বড় হবে থাকবে । ডালিম বা আনাড়ের চারা সাধারণত লম্বালম্বি বড় হয় । আগা কেটে দিন । তাহলে পাশে নতুন ডালপালা ছাড়বে । একটু বড় হলে, কীটনাশক স্প্রে করুণ ।  বাজারে "নাইট্রো" নামের একটি কীট নাশক পাওয়া যায় । এটি ভাল কাজ করে । প্রথম ব্যবহারের ১৫ দিন পর আবার ব্যবহার করুণ ।  কীটনাশক বিকেলে বা সন্ধ্যায় প্রয়োক করুণ । 

ফল : 

প্রথম বছর ফল না নেওয়াই ভাল । ডালিম জাত ভেদে বছরে দু থেকে তিনবার ফলন দেয় । ফুলের কলি থাকা অবস্থায় এসিআই কোম্পানির "ফ্লোরা" নামের পিজিআর একবার স্প্রে করুণ । ফল গুটি বাঁধলে আরেক বা ব্যবহার করতে হবে ।এ সময় নিয়মিত পানি দিয়ে যেতে হবে । তবে খেয়াল রাখতে হবে । ড্রামে পানি যেন আটকে না থাকে । ড্রেনের ড্রেনজ ব্যবস্থা ভাল থাকতে হবে ।ড্রামের উপরি ভাগের মাটি শুকিয়ে গেলেই ক্যাবল পানি দিতে হবে । মাটিতে আঙুল ঢুকিয়ে দেখে নিন ভেতরের মাটি ভেজা আছে কিনা ।পানি দেবার উপযুক্ত সময় হচ্ছে, ভোরে কিংবা রাতে । ড্রামের কিনার ঘেষে পানি দিন । মাঝে মাঝে গোড়া হালকা পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিতে হবে । এতে গাছের স্বাস্থ্য ভাল থাকবে ।গোড়া পচা রোগ হবে না । 


 

সার প্রয়োগ : 

যেহেতু শুরুতেই সার প্রয়োগ করা হয়েছে সেহেতু প্রথম বছর কোন প্রকার সার প্রয়োক করার প্রয়োজন নেই । তবে মাঝে মাঝে ষরিষার খৈইর ভেজানো পানি এক লিটার দশ লিটার পানির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে । গাছের চারিপাশে দেওয়া যেতে পারে ।  তবে গাছের গোড়ায় না দেওয়াই ভাল । গাছে ফুল ফল থাকলে চার থেকে পাচ চামচ পটাশ সার দিতে হবে ।  শুকনো গোবর সার উপরি ভাগে ছড়িয়ে দিতে তা মাটির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি করবে । 


ফল পেকে লাল বর্ণ ধারন করলে তা কেটে সংগ্রহ করতে হবে । ফল সংগ্রহের সপ্তা খানেক পর গাছ ছেটে দিন । নতুন শাখা প্রশাখা বের হয়ে গাছ আরো শক্তিশালী হবে ।  

                                                                                      শেষ